পাখিদের তাড়ানোর জন্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ৮০টি পাখি। বন বিভাগ এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছিল। তার মধ্যে পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের আনুমানিক ক্ষতি এক কোটি টাকা ও পরিবেশের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা। এই ক্ষতির জন্য আদালতে মামলাও করা হয়েছিল।
চার বছর আগে এ ঘটনা ঘটেছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল ছাড়েনি। প্রজনন মৌসুমে শামুকখোল পাখিরা আসে। আরও থাকে পানকৌড়ি ও নিশিবক।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে শামুকখোল পাখিরা প্রজনন মৌসুমে বাসা বাঁধে। বাচ্চা ফুটিয়ে তারা আবার চলে যায়। নিশিবক ও পানকৌড়ি প্রায় সারা বছরই থাকে। ২০২০ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বিষ্ঠায় পরিবেশ নষ্টের অজুহাতে কিছু গাছের ডালপালা কেটে দিয়েছিল।
এ ঘটনার পর পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করে। এরপর হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেছিলেন, হাসপাতালের পরিবেশ ও পাখি নিয়ে মানুষের আবেগ, এই দুটি বিষয়কে সমন্বয় করেই তিনি কাজ করবেন। পাখির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড্রেন নির্মাণের জন্য একটি অর্জুনগাছ কাটা হলে উড়তে না শেখা শতাধিক পাখির ছানা মাটিতে পড়ে যায়। কিছু পাখি মারা যায়। আর কিছু পাখির ছানা জবাই করে নিয়ে যান শ্রমিক ও রোগীর স্বজনেরা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
ঝিনাইদহের গ্রামটি এখন ‘পাখির গাঁ
এত অত্যাচারের পরও পাখিরা হাসপাতাল ছাড়েনি। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, শামুকখোল খুব বাছাই করা গাছে বাসা বাঁধে। তারা প্রথমেই নিরাপত্তা বিবেচনা করে। যেখানে মানুষের ভিড় বেশি, সেখানে মানুষ পাখিদের বিরক্ত করে না—এটা তারা বুঝে গেছে। আবার বাসা বানানোর উপকরণ ও খাবারের উৎস সহজলভ্য কি না, সেটাও তারা বিবেচনায় রাখে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোশাররফ হোসেন ২০০৪ সাল থেকে এই হাসপাতালে কর্মরত। তিনি বলেন, আগে শামুকখোল পাখিগুলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের গাছগুলোয় থাকত। ২০১৮ সালে সেসব গাছ কাটা হলে তারা হাসপাতাল এলাকায় চলে আসে। এর আগে হাসপাতল এলাকায় অনেক কাক থাকত। পাখির বিষ্ঠার কারণে রোগীদের ভোগান্তি হতো। এ কারণে হাসপাতাল এলাকার গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল এলাকা ছেড়ে যায়নি।
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এল চড়ুই, কিচিরমিচিরে মুখর মহাসড়কের দুই
গাছ কাটা ও পাখি হত্যার ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছিল। বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
আড়িয়ল বিলে পাখির খোঁজে
কয়েক দিন আগে হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরের ন্যাড়া জারুলগাছগুলোতেও পাখিরা একেবারে গাদাগাদি করে বাসা তৈরি করেছে। পাখিগুলো গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে। হাসপাতালের সামনের সড়ক বিভাজকের ছোট ছোট গাছেও পাখিরা ভিড় করে আছে। গাছগুলো এত ছোট, যে কেউ চাইলেই পাখিদের ছুঁতে পারবে, কিন্তু সেদিকে পাখিদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পাখির বাসার নিচেই আছে একাধিক খাবারের দোকান। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, হাসাপাতাল এলাকায় যাঁরা থাকেন বা আসেন, তাঁদের অন্যদিকে তাকানোর সময় থাকে না। কেউ ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে, কেউ আসেন রোগী নিয়ে। পাখি দেখতে কেউ আসেন না। পাখির বাসা ভাঙার সময় কারও নেই।
