রাজশাহী-কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকায় পদ্মা নদীর চরে গতকাল সোমবার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অনেক গুলির খোসা ও কয়েকটি তাজা গুলি জব্দ করে পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল ‘রাজশাহীর বাঘা নাকি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর’, তা নির্ণয় করতে দেরি হওয়ায় আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত জোড়া খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি।
ঘটনাস্থল চিহ্নিত করতে আজ রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা গুগল মানচিত্রের সাহায্যে জায়গাটি চিহ্নিত করেন। খুব সামান্য ব্যবধানে পদ্মার চরের এই জায়গা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার মরিচা ইউনিয়নে পড়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কুষ্টিয়ার ‘কাকন বাহিনী’র লোকজন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁরাই সেখানে বালুর সিন্ডিকেট চালান। তিনি বলেন, বাঘার সীমানা পার হয়ে নাটোরের লালপুরের এলাকা পার হয়ে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা সেখানকার আদি বাসিন্দা। নদীভাঙনের কারণে বাঘার ভেতরে এসে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁরা সেখানে খড় কাটছিলেন। জমি দখল করাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটে।
আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আসলে দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা। নদীভাঙনের কারণে তাঁরা বাঘার ভেতরে এখন অস্থায়ীভাবে থাকেন। ঘটনাস্থলও দৌলতপুরের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, হিসাব-নিকাশ করে রাজশাহীর এসপি স্যার ঘোষণা দেন, মামলাটি দৌলতপুর থানাতেই হবে। তা ছাড়া মামলার মেরিট নষ্ট হয়ে যাবে।
ওসি সোলায়মান শেখের দাবি, গুলির খোসা গণনা হয়নি। ৭০ থেকে ৮০টা হতে পারে। তিনি বলেন, জায়গা শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় মামলা কোন থানায় হবে, তা ঠিক করতে দেরি হয়েছে। মামলা করার জন্য নিহত আমানের বাবা মিনহাজ মণ্ডলকে থানায় ডাকা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদীর ভেতরে দিয়ে ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে হয়েছে। তারা গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ঘটনাস্থল ঠিক করেছেন।
গতকাল পদ্মার চরে গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত দুজন হলেন আমান মণ্ডল (৩৬) ও নাজমুল মণ্ডল (২৬)। তাঁরা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা বলে গতকাল রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। যদিও তাঁরা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা। নদীভাঙনের কারণে বাঘায় চলে আসেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস জানান, আহত মুনতাজ মণ্ডল (৩২) ও বারিক হোসেন (১৮) হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁরা দুজনই গুলিবিদ্ধ। দুজনই গুরুতর আহত।
পুলিশ ও হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চলাঞ্চলের জমি দখল নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কাকন বাহিনীর লোকজন বাঘার মুনতাজের পক্ষের লোকজনের ওপরে গুলি চালান।
